জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

সাধারণত আমাদের সবারই জ্বর হয়ে থাকে। যেকোনো সময় জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমানোর জন্য আমরা বেশিরভাগ ওষুধের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমানো যায়। তাছাড়া জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমা শরীরের জন্য ভালো।
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
সব সময় ওষুধ শরীরের জন্য ঠিক না। কিন্তু আমরা অনেকেই জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় খুব একটা জানিনা। যারা আমরা জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানি না তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট। চলুন জানা যাক। 

সূচিপত্রঃ জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত

জ্বর কমানোর ঘরোয়া কিছু টোটকা

জ্বর কমানোর ঘরোয়া কিছু টোটকা বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে প্রাকৃতিক জিনিস দ্বারা জ্বর কমানো উপায়। আমরা অনেকেই আছেন জ্বর কমানোর জন্য আগে ডাক্তারের দোকান থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে আসে। যাতে তাড়াতাড়ি জ্বরটা কমে যায়। কিন্তু আপনি কি জানেন ওষুধ আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর? 
এটা ঠিক ওষুধ খেলে তাড়াতাড়ি জ্বর কমে কিন্তু সব সময় আমাদের শরীরের জন্য ওষুধ ঠিক না। ওষুধ শরীরের যতটা না ভালো করে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। তাই সব সময় ওষুধের উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। ঘরোয়া উপায়েও আসুক ভালো করা যায়। তেমনি জ্বর কমানোর ঘরোয়া কিছু টোটকা রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো 

জ্বর কমাতে জলপট্টির ব্যবহার
আমরা অনেকেই জানিনা জ্বর হলে জল পড়তে ব্যবহার করতে হয়। জল পর্টি বলতে এক টুকরো কাপড় পানিতে ভিজিয়ে কপালের উপর দিয়ে শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানো হয়। জ্বরের মাত্রা যখন অনেক বেশি হয়ে যায় তখন এই জলপট্টি করা হয়। এইভাবে কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে কয়েকবার করে কপলের উপর দিলে আস্তে আস্তে তাপমাত্রা অনেকটা কমতে শুরু করে।

জ্বর কমাতে লেবু ও মধুর ব্যবহার
জ্বর কমাতে লেবু ও মধুর ব্যবহার অনেক কার্যকরী। মধু ও লেবুর কার্যকারিতা পেতে হলে আপনি এক চামচ মধু ও একটা লেবুর অর্ধেক কেটে তার রস হালকা কুসুম কুসুম গরম পানিতে মিশে খেতে হবে। এটি খেলে শরীরের ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ফলে জ্বর কমাতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

জ্বর কমাতে আদা ও মধুর ব্যবহার
জ্বর কমাতে আদা ও মধুর ব্যবহার অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। জর হলে একটুখানি আদা রস বা এক চামচ আদা বাটা ও মধু দিয়ে হালকা কুসুম কুসুম গরম পানিতে নেড়ে এটি দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে হবে। এতে জ্বর অনেকটা কমে যাবে।

জ্বর কমাতে তুলসী পাতার ব্যবহার
জ্বর কমাতে তুলসী পাতার ব্যবহার অতুলনীয়। এটা বহুকাল থেকে ডাক্তারি চিকিৎসা প্রমাণিত জ্বর কমাতে তুলসী পাতার ব্যবহার করলে জ্বর সর্দি অতি তাড়াতাড়ি কমে যায়। এই তুলসী পাতা সেজে রস করে গরম করে খেলে জ্বর এবং সর্দির উভয় কমে যায়। এছাড়াও আপনি আরেক ভাবেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। গরম পানিতে এই তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিয়ে এই পানি খেলে জ্বর কমে যায়।

জ্বর কমাতে রসুন ও মধুর ব্যবহার
জ্বর কমাতে রসুন ও মধুর ব্যবহার যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। জ্বর কমাতে রসুনের কোয়া থেকে এক কোয়া রসুন নিয়ে সেটি থেতলিয়ে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানির মধ্যে মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। তাহলে জ্বর ভালো হয়ে যাবে। 
এই সবগুলোই জ্বর কমানোর ঘরোয়া টোটকা। জ্বর কমানোর ঘরোয়া এই টোটকা গুলো যদি যথাযথভাবে আমরা ব্যবহার করি তাহলে অবশ্যই জ্বর কমে যাবে। তাই আমরা যারা জ্বর কমানোর ঘরোয়া টোটকা গুলো মেনে চলব। 

জ্বর কমানোর খাবার

জ্বর কমানোর খাবার নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। জ্বরের সময় আমরা কোন কিছুই খেতে পারি না। কারণ জ্বরের সময় মুখের স্বাদ কমে যায়। অনেকে জ্বরের সময় প্রচুর পরিমাণে বমি করে। যার ফলে তার আর খাওয়ার প্রতি কোন রুচি আসে না। কিন্তু এটি করা যাবে না। জ্বরের সময় অবশ্যই ভিটামিন জাতীয় এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
জ্বর কমাতে আমরা ঘরোয়া টোটকা গুলোর সাথে সাথে প্রোটিন, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম যে খাবারগুলোতে বেশি রয়েছে সে খাবারগুলো খাব। কেননা জ্বরের সময় আমাদের প্রচুর পরিমাণে শরীর দুর্বল হয় এবং শক্তি কমে যায়। যা থেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠা আমাদের খুব দুষ্কর হয়ে ওঠে। জ্বরকে আমরা কখনোই হেলাফেলা করব না।
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
কারণ সামান্য জ্বর থেকে অনেক কিছু হতে পারে। তাই জ্বরের সময় খাবারের প্রতি আমাদের সবসময় নজর রাখতে হবে। যাতে জ্বরের সময় কোনভাবে না খেয়ে না থেকে অল্প অল্প করে হলেও ভিটামিন প্রোটিন অপুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এতে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং শরীরের দুর্বলতা কমে। জ্বরের সময় আমরা বেশি চর্বি জাতীয় জিনিস না খেয়ে কোন চর্বি জাতীয় মাংস মাংস মাংসের সুপ খেতে পারি।

যদি আমাদের মাংস না থাকে আমরা সবজির চুপ করেও খেতে পারি। খুব শরীরের প্রোটিন বাড়াতে সাহায্য করে। জ্বর জ্বরের সময় আমাদের খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও জ্বরের সময় আমরা তাজা ফলমূল খেতে পারি। এই ফলমূল গুলো যেন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল হয়। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে এনার্জি বাড়ায়।

শিশুর জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

শিশুর জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আমাদের বিশেষভাবে জানতে হবে। কারণ বড়দের চাইতে শিশুরাই জ্বরে আক্রান্ত হয় বেশি। তাই জ্বর হলে শিশুদের প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে। কিভাবে শিশুদের তাড়াতাড়ি জ্বর কমিয়ে সুস্থ করা যায়। শিশুদের জ্বর থেকে শেরে তোলার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। আপনারা এই উপায় গুলো মেনে চলতে পারেন।
  • শিশুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলে শিশুকে একটু পর পর জল পট্টি করে দিতে হবে।
  • অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলে তাকে ঠান্ডা পানিতে গোসল না করে কুসুম কুসুম গরম পানিতে গোসল করে দিন। এতে শিশু শরীরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।
  • শিশুর যদি গোসল না করতে চায় তাহলে শিশুকে কুসুম কুসুম গরম পানি গামছা বাত কয়লা ভিজিয়ে শিশুর সম্পূর্ণ শরীর মুছে দিন। এতে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমবে।
  • জ্বরের সময় শিশুকে অবশ্যই তরল জাতীয় খাবার বেশি খেতে দিন। যেমন স্যালাইন পানি, ডাবের পানি, আখের গুড়ের শরবত, ভিটামিন সি জাতীয় ফলের শরবত খেতে দিন। কেননা জ্বরের সময় শিশুর শরীর থেকে তরল বেশি পরিমাণে বেরিয়ে যায়। যার কারণে তরল জাতীয় খাবার বেশি খেতে দিতে হবে।
  • জ্বরের সময় শিশুকে কখনোই খালি গায়ে রাখবেন না। শিশুকে অবশ্যই ঢিলাঢালা জামা পরিয়ে দিবেন। ঢিলা ঢালা জামা পরলে শরীরের ভিতরে বাতাস চলাচল করবে। এতে শিশু স্বস্তি বোধ করবে।
  • শিশুকে অবশ্যই জ্বরের সময় ভাজাপোড়া খাওয়াবেন না। শিশু যদি কিছুই খেতে না চায় আপনি বিভিন্ন ধরনের সবজি শাক সব ধরনের ডাল পরিমাণ মতো নিয়ে অল্প পরিমাণে চাল দিয়ে পাতলা খিচুড়ি রান্না করে খেতে দিন। এতে শিশু শরীরে পুষ্টি ও যোগাবে এবং শিশুর পেট ভরা থাকবে।
তবে হ্যাঁ শিশুর শরীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকলে এই উপায়গুলো আপনি মেনে চলতে পারেন। কিন্তু এই স্বাভাবিক তাপমাত্রার চাইতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রীর উপরে হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর জ্বরের চিকিৎসা করাতে হবে। তা না হলে শিশু সমস্যা হতে পারে।

জ্বর সর্দি কমানোর ঘরোয়া উপায়

জ্বর সর্দি কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ম ভাবে মেনে চললে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। সাধারণত আমরা জ্বর সর্দিকে খুব একটা সিরিয়াস ভাবে নেয় না।। কেননা জ্বর সর্দি অন্যান্য রোগের মত অতটা ক্ষতিকারক না এটাই আমরা ভাবি। কিন্তু হ্যাঁ ৫ দিনের চাইতে বেশি জ্বর সর্দি থাকলে সেটি অবশ্যই শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

পাঁচ দিনের বেশি জ্বর সর্দি থাকলে সেটি সাধারণ জ্বর সর্দি নয় চিকিৎসকদের মতে। পাঁচ দিনের মতো জল সর্দি থাকলে সেটি সিজনাল জ্বর সর্দি বলা হয়। কিন্তু পাঁচ দিনের বেশি হয়ে গেলে সেটি অবশ্যই সিজনাল নয় এটি ক্ষতিকারক। জ্বর সর্দি কমানোর কয়েকটি ঘরোয়া উপায় আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।
  • জ্বর সর্দি হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে
  • এই সময় সব সময় শরীর উষ্ণ থাকতে হবে এর জন্য সিজন ভেদে আরামদায়ক কাপড় পরিধান করতে হবে
  • এই সময় খুব বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এবং বিভিন্ন ধরনের শরবত জুস চিড়া ভিজানো পানি কচি ডাবের পানি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এ সময় এই তরল জাতীয় খাবার শরীরের পানি শূন্যতা কমায়। জ্বর সর্দি কমাতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও এই সময় আপনি চা পান করতে পারেন। যার শরীরকে উষ্ণ রাখে। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে দুধ চা পান না করা। রং চা পান করতে পারেন। এ রং যার সাথে লেবু মিশে খেলা অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
  • জ্বর সর্দি থাকলে আদা চা খুব উপকারী। জ্বর সর্দি হলে তখন গলা ব্যথা অনুভব হয় এই সময় আদা চা পান করা গলার জন্য অনেকটা উপকারী।
  • জ্বর সর্দি সময় নুন দিয়ে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে করে গড়গড়া করতে পারেন। এতেও গলা ব্যথা ঠান্ডা উপশম হয়।
  • এই সময় লেবু মধু ও গরম পানি দিয়ে পান করলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া এই সময় কাশি সারার জন্য মধু খেতে পারেন এটি খুব কার্যকরী। কিন্তু হ্যাঁ এটি ছোট বাচ্চাদের জন্য একদমই প্রযোজ্য নয়।
  • জ্বর সর্দি কাশির সময় পুদিনা পাতার রস খেলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়। এই পুদিনা পাতার রস বা পুদিনা পাতা গরম পানির মধ্যে দিয়ে আপনি খেতে পারেন।
  • সর্দি কাশির আরেকটি বড় ওষুধ হলো তুলসীর রস। তুলসী রসের সাথে আপনি মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
আরেকটি কথা না বললে না সর্দি কাশি কমার জন্য অবশ্যই মুখে মার্কস ব্যবহার করবেন। কারণ সর্দি কাশি এক ধরনের ভাইরাস যা হাসিখাসীর সাথে সবসময় বের হয় এবং এটি আমাদের হাতে মুখের লেগে থাকে। তাই এই সময় অবশ্যই মার্কস ব্যবহার করবেন এবং নিয়মিত হালকা কুসুম গরম পানি ও সাবান হাত ধুতে হবে।

দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় কি

দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় অনেকগুলোই রয়েছে। কিন্তু এই উপায়গুলো আমাদের জানতে হবে এবং ভালোভাবে সেটি মেনে চলতে হবে। তাহলে দ্রুত জ্বর কমবে। জ্বর খুব সহজে আসে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সারতে চায় না। এই জ্বর দ্রুত সারানোর জন্য অবশ্যই আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। 
তাহলে দ্রুত জ্বর থেকে সেরে ওঠা যাবে। জ্বরের সময় শরীর যাতে দুর্বল না থাকে এজন্য নিয়ম করে খাবার খেতে হবে। চলুন দ্রুত জ্বর কমানোর জন্য কয়েকটি পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই।

মাংসের সুপ
জ্বরের সময় আপনি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন যেমন মাংসের সুপ করে খাবার খেলে শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। বিশেষ করে এই সময় মুরগির মাংসের সুপটা খাওয়া উচিত।

পাতলা খিচুড়ি
জ্বরের সময় আপনি পাতলা করে খিচুড়ি রান্না করে খেতে পারেন। চাল ডাল সবজি শাক সব কিছু দিয় খিচুড়ি পাতলা করে রান্না করলেন এটি খেতেও মজা লাগে এবং এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানও পাওয়া যায়।

বেদেনা
জ্বরের সময়ে বেদানা খাওয়া খুবই উপকারী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। এবং এটি শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া আপনি অন্যান্য কাঁচা ফলও খেতে পারেন এটি খুবই উপকারী।

শরবত
জ্বর থাকাকালীন সময়ে আপনি বেশি বেশি ফলের শরবত আখের শরবত গুড়ের শরবত এগুলো খেতে পারে। এগুলো আপনার শরীরে পুষ্টি যোগাবে এবং ক্লান্তি দূর করবে। আপনি বেশি বেশি তরল জাতীয় জিনিস তরল পানি পান করবেন।

এছাড়াও আরামদায়ক ও সহনশীল কাপড় চোপড় পরিধান করবেন। এ সময় অস্থিতিকর কোন কিছুই করবেন না। বেশি বেশি বিশ্রাম নিবেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। তাহলে আশা করা যায় খুব দ্রুতই জ্বর কমে যাবে। এই সবগুলো জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়।

জ্বর হলে কি গোসল করা উচিত

জ্বর হলে কি গোসল করা উচিত? হ্যাঁ অবশ্যই জ্বর হলে গোসল করা উচিত। জোর হলে আপনি গোসল করবেন। চিকিৎসকরা জ্বর হলে গোসল করার বা শরীর মুছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি হয়ে থাকে। এই জন্য জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য চিকিৎসকরা গোসল করতে বলেন।

কিংবা যাদের সমস্যা হয় তাদের ভেজা গামছা বা তয়লা দিয়ে পুরো শরীর মুছে নিতে বলে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। জ্বর হলে গোসলের পর বা শরীর কয়লা দিয়ে মুছে নেয়ার পরে ফ্যানের নিচে থাকলে অনেকটা ভালো। কিন্তু অবশ্যই ফ্যানের পাওয়ার খুব কম হতে হবে। কারণ বেশি পাওয়ারের আবার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এর ফলে জ্বর আসতে পারে। 

অনেকেই আমরা জানি না এই কথা। এমনকি অনেকে আমরা এটাও জানে না জ্বর হলে গোসল করা যায় কি যায় না। জ্বর হলে দেখবেন অনেক শীত করবে এবং মাথা ধরে থাকবে। জ্বরের সময় গোসল দিলে শরীর ঝিমঝিম করবে না মাথাও ধরবে না। গোসল দিলে শরীরের মধ্যে ভালো  লাগে অনেকটা রিলিফ পাওয়া যায়।

তাছাড়া জ্বর হলে একদম গোসল করা যাবে না এটা বিশেষজ্ঞরা বলেনি। বরং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন জ্বর হলে অবশ্যই তাপমাত্রা কমানোর জন্য হালকা কুসুম কুসুম পানি দিয়ে গোসল করতে। একদম ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। নরমাল থান্ডা পানির সাথে কুসুম গরম পানি মিসিয়ে গোসল করতে হবে। না হলে জ্বর আরো বেড়ে যাবে।

জ্বর হলে কি ডিম খাওয়া যায়

জ্বর হলে ডিম খাওয়া যাবে কি যাবে না অনেকেরই প্রশ্ন। হ্যাঁ বন্ধুরা জ্বর হলে ডিম খাওয়া যাবে। ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার। ডিমের পুষ্টি বাড়ায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জ্বরের সময় শরীর দুর্বল ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। তাই এই শক্তি বাড়ানোর জন্য ডিমের ভূমিকা অন্যতম। তাই জ্বরের সময় ডিম খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
তবে একটা কথা জ্বর হলে ডিম খাওয়া যাবে কিন্তু হাঁসের ডিমটা না হয় ভালো। কারণ জ্বরের সময় ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জ্বর যখন হয় তখন জ্বর সর্দি কাশি একসাথে হয়। তাই এই জ্বর সর্দি কাশি ঠান্ডা লাগার হাত থেকে বাঁচার জন্য হাঁসের ডিম না খাওয়াই ভালো। কারণ হাঁসের ডিমের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এলার্জি এবং ঠান্ডার ভাব।তাই জ্বর সর্দি কাশি এগুলোর সময় হাসির ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

জ্বরের সময় আপনি মুরগির বা কোয়েল পাখির ডিম বেশি বেশি করে খেতে পারেন। বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশ বেশি পুষ্টিকর।এ সময় আপনি ডিম দিয়ে চুপ করে খেতে পারেন। সুপটা জ্বরের সময় খুব কার্যকারী। তাই আপনি ডিম দিয়ে সবজি দিয়ে আরো অনেক কিছু মিক্স করে স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরে পুষ্টি যোগাবে।

জ্বর হলে কি চা খাওয়া উচিত

জ্বরের সময় চা খেলে শরীর উষ্ণ থাকে। যার শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। শরীরের প্রশান্তি এনে দেয়। এজন্য জ্বর হলে চা খাওয়া উচিত। জ্বর হলে আমরা বিভিন্ন ধরনের চা করে খেতে পারি। যেমন আদা চা, রং চা, মেথি চা, হারবাল চা ইত্যাদি। এছাড়া আমরা পুদিনা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারি। এটি রোগ প্রতিরোধ কমাতে সাহায্য করে।

৮-১০টা পুদিনা পাতা অল্প করে লিকার দিয়ে ও হালকা চিনি দিয়ে চা বানিয়ে খেলে জ্বরের সময় অনেক উপকার পাওয়া যায়। আদা চা আমরা সবাই জানি। আদাকে থেতলিয়ে আদার রস বের করে চায়ের লিকার ও একটা লেবুর অর্ধেক রস দিয়ে পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। এটা অনেক উপকার। এইটা শরীরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। 

মেথি দিয়ে আপনি চা বানিয়ে খেতে পারেন। কারণ মেথিতে রয়েছে নানা ধরনের উপাদান যার শরীরের জন্য খুবই উপযোগী। মেথির শুধু শরীরের জ্বর কমাতে সাহায্য করে না অনেক ধরনের সংক্রামক থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।খালি রং আপনি খেতে পারেন মধু লেবু স মিশিয়ে। এই চাও আপনাকে ক্লান্তি দূর করে দেবে। এবং জ্বর সর্দি ঠান্ডা গলা ব্যথা সারতে সাহায্য করে এইটা।

কমলালেবু কি জ্বরের জন্য ভালো

কমলালেবু জ্বরের জন্য অবশ্যই ভালো। কেননা কমলালেবুতে ভিটামিন সি কোন অভাব থাকে না। লেবুর মতো কমলালেবু তো ভিটামিন সি রয়েছে। জ্বরে আমরা অন্যান্য ফলের সাথে সাথে ভিটামিন সি জাতীয় ফল বেশি খেতে বলা হয়। কারণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার শরীরের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে। এবং ভিটামিন সি মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

জ্বরের সময় ছোট বড় সকলের মুখে রুচি উঠে যায়। অনেকের জ্বরের সময় বমি বমি ভাব হয় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় রুচি উঠে যায়। এই সময় যদি অন্যান্য খাবারের সাথে সাথে কমলালেবু বেশি বেশি খাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই মুখে রুচি ফিরে আসবে। তাছাড়া কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

এইজন্য জ্বরের সময় কমলা লেবু খাওয়াটা অনেক দরকারি। কেননা জ্বরের সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কমলালেবুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া কমলালেবু হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এই সময় অনেকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। কমলালেবু হজম শক্তি বাড়িয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করে।

লেখক এর শেষ কথা

জ্বর হলে শুধু যে ওষুধ দিয়ে জ্বর কমানো যায় এটা কিন্তু ঠিক কথা নয়। আমরা যদি একটু সতর্কতা সাথে ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করে তাহলে জ্বর থেকে আমরা বাঁচতে পারি। সাধারণত ডাক্তাররাও বলে সাধারণ জ্বর যেটি দুই থেকে তিন দিন বা চার দিন সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায় সেই জ্বরের জন্য ঘরোয়া উপায় গুলো মানলেই জ্বর সেরে যাবে। এর জন্য ওষুধের খুব একটা প্রয়োজন পড়বে না। 

ঘরের উপায় গুলো কি এবং কিভাবে এর ব্যবহার করা যায় সবকিছুই আপনাদেরকে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে। আপনি যদি উপরের উল্লেখ করা জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়গুলো ঠিকঠাক ভাবে মেনে চলতে পারেন তাহলে অবশ্যই দ্রুত জ্বর থেকে সেরে ওঠা যাবে। 

তবে হ্যাঁ জ্বরটা যদি সপ্তাহের বেশি দিন থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই ভাইরাস জ্বর। আর এর জন্য অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রিয় পাঠক আমার এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রিজু ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url