ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা

ডিম পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার। ছোট থেকে বড় সবাই ডিম খেতে পছন্দ করে। এমন কেউ নেই যে ডিম খেতে পছন্দ করে না। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি জাতীয় উপাদান।
ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা
ডিম শুধু আমাদের শরীরের পুষ্টিই যোগায় না ডিম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। ডিমের রয়েছে হাজারো পুষ্টিগুণ। তাই বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সাথে ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা করব।

সূচিপত্রঃ ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা করা হলো

সুপারফুড হিসেবে ডিমের পুষ্টিগুণাগুন

সুপার ফুড হিসেবে ডিম কে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ ডিমে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। তাছাড়া ডিম সহজ লভ্য হওয়ায় সকলেই ডিম সরবরাহ করতে পারে। অন্যান্য পুষ্টিকর জিনিসের দাম বেশি থাকায় সেটি লোকজন কিনতে না পারলেও ডিম সহজে সবাই কিনতে পারে। তাই প্রায় সবার খাদ্য তালিকাতেই ডিম থাকে। ডিমে প্রচুর পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। 

গবেষণা থেকে পাওয়া গেছে ডিমের রয়েছে ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি টু, কোলাইন, সায়ানোকোবেলামিন, ফলেট, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, কোলেস্টেরল, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম, আইরন ও জিংক। ডিমে এত ধরনের পুষ্টিগুণ থাকার কারণেই ডিমকে সুপারফুড বলা হয়। এই সুপার ফুট ডিম ছোট বাচ্চাদের থেকে শুরু করে বড় এবং গর্ভবতীর মায়ের জন্য স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। 
ডিম শরীরের প্রায় সকল ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে স্বয়ং ভূমিকা পালন করে। এইজন্য ডিমকে সবার খাবার তালিকায় রাখা অবশ্যক। আপনার খাবার তালিকায় আর কিছু থাকবে না থাক ডিমকে রাখার চেষ্টা করবেন। ডিম যেমন আপনার শরীরে পুষ্টি যোগাবে তেমনই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনার মধ্যমে ডিমের গুণাগুণ গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরা হলো।

ডিমের উপকারিতা সমূহ

ডিমের উপকারিতা সমূহ আলোচনা করলে এটি শেষ করা যাবেনা। ডিমে এত পরিমাণের উপকারিতা রয়েছে যা আপনি ধারণাও করতে পারবেন না। আমরা সাধারণভাবে জানি ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার তাই এটি আমাদের খেতে হয়। কিন্তু ডিম আমাদের কি কি উপকারে আসে সেটা কি আমরা সকলেই জানি। না বন্ধুরা আমরা সকলেই জানি না। চলুন এবার ডিমের উপকারিতা সমূহ আলোচনা করা যাকঃ
  • ডিম লো প্রেসার এর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের লো প্রেসার তারা নিয়মিত যদি ডিম খায় তাহলে লো প্রেসার তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
  • ডিমে থাকা ভিটামিন এ যেমন চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে তেমনি চোখে কম বয়সে ছানি পড়া রোধ করে।
  • ডিমে থাকা ফলিক এসিড উপাদানটি গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী। এটি গর্ভাবস্থায় শিশুর জন্মগত রোগ স্পাইনা বাইফিডা প্রতিরোধ করে।
  • ওমেগা ৩ ফ্যাট ডেকাসোহেক্সানয়িক এসিড ডিমে থাকা এই উপাদানটি মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি মানুষের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • লুটেইন এবং জিয়া জ্যানন্থিং এন্টি অক্সিডেন্ট রেটিনা কে রাখে সুস্থ
  • ভিটামিন এ এবং সায়ানোকোবেলামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • ডিমে থাকা প্রোটিন মানুষের শরীরে টিস্যুকে মেরামত করে এবং মাংস পেশীকে শক্তিশালী করে।
  • ডিমে থাকা কোলিন শিশুর মস্তিষ্ক এর বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। আপনি যদি বাচ্চাকে দুই বছর থেকে নিয়মিত ডিম খাওয়ান তাহলে বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ খুব তাড়াতাড়ি ঘটবে এবং সে ইনস্ট্যান্ট এনার্জি পাওয়া শুরু করবে।
  • ডিম মানুষের শরীরে ক্ষত পূরণের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • ডিমে আছে ভিটামিন বি ১২ যা মানবদেহের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি প্রদান করে।
  • চুল ও নখের যত্নে ডিম এর ব্যবহার অন্যতম। নখ ভেঙে যাওয়া দূর করতে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ডিম খাওয়া খুবই উপকারী

ডিমের অপকারিতা সমূহ

ডিমের অপকারিতা সমূহ বলতে ডিম খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি ডিম খাওয়াতে কিছু সতর্কতা রয়েছে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এই সর্তকতা এক নয়। ডিম একটি পুষ্টি কর খাদ্য। এটি প্রায় ছোট বড় সবাই খেতে পারবে। কিন্তু শুধু সর্তকতা তাদের ক্ষেত্রে যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে। আপনি যদি হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী হন তাহলে ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 
আরো পড়ুনঃ
তবে হ্যাঁ আপনি যদি হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী আর আপনি যে একেবারে ডিম খেতে পারবেন না তা নয়। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের চাইতে আপনাকে তাদের তুলনায় খুব কম পরিমাণে ডিম খেতে হবে। তারা যদি দিনে তিনটি ডিম খায় সেখানে আপনি একটি ডিম খেতে পারবেন। তাছাড়া আপনি যদি হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী হয়ে থাকেন আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খেতে পারেন। 

চিকিৎসক আপনাকে ঠিক কতটুকু পরিমান ডিম খেতে পারবেন আপনার শরীরের জন্য কতটুকু ডিমের প্রয়োজন সেটির একটা চাট করে দিবে। তাই যারা হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী তাদের জন্য ডিম খুব বেশি উপকারে আসে না। ডিম খাবার সময় তাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করে খেতে হবে। ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনার মধ্যে ডিমের অপকারিতা বা সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। এটা সবার জানা দরকার।

ডিম খাওয়ার পদ্ধতি

ডিম খাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে। কেননা আপনি যদি ডিম খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি না জানেন তাহলে ডিম থেকে আপনি প্রয়োজনে পুষ্টি পাবেন না। ডিম খুবই পুষ্টিকর খাদ্য কিন্তু এই পুষ্টিকর খাদ্য থেকে পুষ্টি সঠিকভাবে পাচ্ছেন কিনা সেটি নির্ভর করবে আপনি কিভাবে ডিমটি খাচ্ছেন। তো বন্ধুরা চলুন এবার আমরা জানবো কিভাবে ডিম খেলে ডিম থেকে আমরা সঠিক পুষ্টি পাব।
ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা
আপনার শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে তাহলে আপনি পুরো সিদ্ধ ডিম ছাড়া খাবেন না। কারণ হাফ বয়েল বা ধা সিদ্ধ ডিম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে না। এই জন্য যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তা হাফবয়েল আধা সিদ্ধ ডিম খাবেন না। তারা সবসময় ডিমটাকে ভালোভাবে পুরো সিদ্ধ অর্থাৎ ডিমের মধ্যেকার অংশ কাঁচা থাকা যাবে না এরকম ডিম খেতে হবে। এভাবে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ
আপনি সিদ্ধ ডিম ভর্তা করেও খেতে পারেন। এতেও আপনি পুষ্টি পাবেন। আপনাকে রান্না করার ডিমও পুরো সিদ্ধ করে রান্না করে খেতে হবে। এতে করে ডিমের মধ্যেকার উপাদান পরিপূর্ণ থাকে এবং আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ডিম যদি কাঁচা থাকে তাহলে ওই ডিমের থেকে ফুটপয়জনিং হতে পারে। যা আপনার শরীরকে অসুস্থ বানিয়ে দিবে।

আপনি যদি ডিম পোচ খেতে চান তাহলে অবশ্যই  খুব সামান্য পরিমাণ তেলে যাতে ডিমটা পোজ করা হয় অর্থাৎ ব্রাশের মাধ্যমে কড়াইয়ে তেল কোন মত লাগিয়ে নিয়ে ডিমটা ভেজে নিলে হয়ে যাবে। ডিম পোচ থেকে আমরা ক্যালরি বেশি পায় কারণ এখানে তেল থাকার কারণে ভিটামিন এ ডি ই কে আমাদের শরীরে অ্যাবজর্ব হয়ে যায়। তাই আমরা যদি সপ্তাহে চার দিন সিদ্ধ ডিম এবং তিনদিন পোচ ডিম খেতে পারি তাহলে পরিপূর্ণভাবে আমাদের শরীর ডিম থেকে পুষ্টিগুণ পাবে।

শিশুদের ডিম খাওয়ার পদ্ধতি

ডিম আমরা ছোট বড় সবাই পছন্দ করি কিন্তু তার মধ্যে শিশুরাই বেশি ডিম খেতে পছন্দ করে। শিশুরা আর কিছু খাবার ভালোভাবে থাক বা না থাক ডিম খুব ভালোভাবে খায়। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে ডিমের ভূমিকা অন্যতম। তাই শিশুকে ডিম এমন ভাবে খাওয়াতে হবে যাতে ডিম থেকে শিশুরা সঠিক পুষ্টিগুন পায় ও সুস্থ থাকে। নিম্নে শিশুদের ডিম খাওয়ার পদ্ধতি তুলে ধরা হলোঃ
  • আপনি যদি শিশুকে ডিম থেকে সঠিক পুষ্টি গুনটি দিতে চান তাহলে আপনি শিশুকে অতিরিক্ত তেলে ডিম পোচ না করে হালকা তেলে ডিম পোচ করে খাওয়াতে পারেন। কিম্বা পানি পোচ করেও খাওয়াতে পারে।
  • আপনি গরম দুধের সাথে ডিম ব্লেন্ড করে ভাবে বসিয়ে পুডিং এর মতো করে শিশুকে খাওয়াতে পারে। এতে করে শিশু খাবার থেকে প্রয়োজন হবে।
  • আপনি বাচ্চাকে ডিমের স্যুপ বানিয়ে খাওয়াতে পারে। ডিমের সাদা অংশ এবং কর্ন দিয়ে মিক্স করে স্যুপ বানিয়ে খাওয়াতে পারবেন এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে।
  • বাচ্চারা যদি ডিমের সাদা অংশ খেতে না চায় তাহলে কুসুম দিয়ে আপনি আলুর সিদ্ধের সাথে মিশে রেসিপি বানিয়ে খাওয়াতে পারবেন কিন্তু সেটি অতিরিক্ত তেলের হওয়া যাবে না।
  • আপনি বাচ্চাকে নুডুলস সিদ্ধ করে সেটিকে ডিমের সাথে মিক্স করে স্যুপ বানিয়ে খাওয়াতে পারেন।
  • বাচ্চাকে কখনোই আপনি কাঁচা ধরনের ডিম খাবেন না। কাঁচা ডিম বাচ্চার ফুডপয়জন করতে পারে।
এইভাবে আপনি ডিমকে নানা জিনিসের সাথে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। এতে করে বাচ্চা ডিমের পুষ্টিগুণের সাথে অন্যান্য পুষ্টিগুনও পাবে ও শিশুর ব্রেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনার মাধ্যমে আপনি আপনার বাচ্চার খাবার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন তাহলে? উপরের নিয়ম গুলো ফলো করে আপনি আপনার বাচ্চাকে ডিমের রেসিপি করে খাওয়াতে পারেন।

ডিম সংরক্ষণ করার পদ্ধতি

ডিম সংরক্ষণ করার পদ্ধতি সম্পর্কে যদি জেনে না থাকেন তাহলে অবশ্যই ডিম সংরক্ষণ করার পদ্ধতি জেনে নিবেন। কেননা আপনি যদি সঠিকভাবে ডিম সংরক্ষণ করতে না জানেন তাহলে আপনি কোন ধরনের ডিম খাচ্ছেন এবং ওই ডিম আপনার জন্য সুইটেবল হবে কিনা এটা বুঝতে পারবেন না।
ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা
কেননা আপনি যদি ডিমের প্রকৃত গুণাগুণ পেতে চান কিংবা ডিম থেকে যে ধরনের উপাদান আমরা পেয়ে থাকি সেটি পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে ডিম সংরক্ষণ করতে হবে। চলুন এবার ভীম সংরক্ষণ পদ্ধতি জেনে নেইঃ 
  • আপনি যখন বাজার থেকে ডিম নিয়ে আসবেন তখন ওই ডিম সাথে সাথেই ফ্রিজে বা সেলফি তুলতে পারবেন না। আপনি অবশ্যই ডিম গুলো গেম ঠান্ডা পানির মধ্যে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবেন। তারপর ভালো করে ধুয়ে এবং মুছে নিয়ে ফ্রিজে উঠিয়ে রাখবেন।
  • ডিম আপনি অবশ্যই ঠাণ্ডা জায়গায় রাখবেন কারণ ডিম ঠান্ডা জায়গায় না রাখলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • আপনাকে এমন ডিম বাছাই করতে হবে যাদের ডিমের বয়স ২৮ দিন পর্যন্ত হয়। অর্থাৎ মুরগি ডিম পরার দিন থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ডিমটি খাওয়া যাবে। ২৮ দিন পর হয়ে গেলে ওয়ে ডিমটি আর খাওয়া যাবে না।
  • বাজার থেকে ডিম নিয়ে আসার পরে ডিম পরিস্কার করে ফ্রিজে রাখার পরে আপনাকে অবশ্যই আবার ভালো করে গরম পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • বাজার থেকে ডিম নিয়ে আসলেন ডিম পরিষ্কার না করে কোন হাড়ি পাতিলে রাখা যাবে না রাখলে সে হাঁড়ি পাতিল ধুয়ে নিতে হবে। কারণ আপনি যে ডিমটি বাজার থেকে নিয়ে এসেছেন সেই টিমের সাথে অনেক ভাঙ্গা ডিম থাকতে পারে আর ওই ভাঙ্গা ডিম থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে। তাই আপনাকে ড্রিম পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • আপনি কখনোই ভাঙ্গা কোন দিন সংরক্ষণ করবেন না। কারণ ভাঙার ডিমের নানা ধরনের প্রয়োজন থাকতে পারে। এই জন্য আপনাকে ভাঙ্গা ডিম সংরক্ষণ করা যাবে না।
প্রিয় পাঠক আপনি তাহলে বুঝতে পেরেছেন কিভাবে ডিম সংরক্ষণ করতে হয়। আমরা মনে করি ডিম একটি সাধারণ জিনিস। তাই ডিম সংরক্ষণ করা নিয়ে খুব একটা বিষয়ে জানিনা। কিন্তু ডিম যতটাই পুষ্টিকর ঠিক ততটাই পয়জন ইফেক্ট জিনিস। তাই আপনি যাতে এই ডিম থেকে কোন প্রকার পয়জন না নিয়ে আসেন সেই জন্য এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে হবে।

কোন ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি

কোন ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি এবং কোন ডিমে পুষ্টিগুন কম সেটি নিয়ে আমরা প্রায় সবাই কম বেশি কনফিউশনে থাকি। আমরা কেউ বলে থাকি হাসির ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি আবার কেউ বলে থাকে দেশি মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি। আবার কেউ কেউ এটা মনে করে যে বয়লার মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ কম দেশে মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি। কিন্তু আসলেই কি এটা সত্যি? 
আরো পড়ুনঃ
তো বন্ধুরা আসলে কোন ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি এবং কোন ডিমের পুষ্টিগুণ কম এটির সত্যতা আজ আমি আপনাদের বলব। আমরা অনেকেই মনে করি বয়লার মুরগি ফার্মে বড় হয় এবং তাদেরকে ফিট খাওয়ানো হয় বলে তাদের ডিম থেকে বেশি পুষ্টি গুনাগুন পাওয়া যায় না। আর দেশি মুরগি প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বড় হয় বলে তাদের থেকে যে ডিম পাওয়া যায় সেটি বেশি পুষ্টি গুণাগুনে ভরপুর।

 কিন্তু না এই কথাটির সত্য না এটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। মূলত দেশীয় বয়লার দুই ধরনের ডিমের মধ্যে ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাট, মোটামুটি সমান পরিমাণে থাকে। শুধু তফাৎ এতোটুকুই দেশি মুরগির ডিমটা ছোট এবং বয়লার মুরগির ডিমটা একটু বড়। এক্ষেত্রে দেশি মুরগির ডিমের সাইজ যেহেতু ছোট শুধু সেহেতু এখান থেকে যদি আপনি সমান পরিমাণ পুষ্টিগুণ পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে দুটো দেশি মুরগির ডিম খেতে হবে। 

তাহলে আপনি একটি বয়লার মুরগির ডিমের সমান পুষ্টিগুণ পাবেন। অর্থাৎ দুটো ডিমে আপনি সমান পুষ্টি পাবেন এবার বুঝতে পারলেন তো আসলেই কোন ডিমে পুষ্টি বেশি আর কোন ডিমে পুষ্টি কম। এবার আসি হাসির ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। একটা হাসির ডিম মূলত একটা ফার্মের মুরগির ডিমের চাইতে ৩০ থেকে ৪০% বেশি বড়। তাই গবেষকদের মতে বয়লার মুরগির ডিমের চাইতে হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ অবশ্যই বেশি।

মুরগির ডিম এবং হাসের ডিমের পুষ্টি উপাদান

একটি মুরগির ডিম এবং একটি হাসের ডিমের মধ্যে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান থাকে সে সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। তার জন্য আপনি বিভিন্ন চিকিৎসকের ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা গুলো শুনতে পারেন। নিম্নে একটি মুরগির ডিম এবং একটি হাসির ডিমের পুষ্টি উপাদান ছকের মাধ্যমে দেখানো হলোঃ
পুষ্টি উপাদান মুরগির ডিম (ফার্ম) হাসের ডিম
ক্যালরি ১৪৯গ্রাম ২২৩গ্রাম
প্রোটিন ১০গ্রাম ১২গ্রাম
ফ্যাট ১১গ্রাম ১৮.৫গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১.৬গ্রাম ১.৪গ্রাম
কোলেস্টেরল ৯২% ২৭৬%
আয়রন ৭% ২০%

ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে প্রশ্ন উত্তর পর্ব

ডিমের প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা বলতে গেলে শেষ হবে না। তাই ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে আপনাদের মনে থাকা কিছু প্রশ্নের সদুত্তর তুলে ধরা হলোঃ

প্রশ্নঃ একদিনে কয়টি ডিম খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ একদিনের একজন সুস্থ সবল মানুষ দিনে দুইটি ডিম খেতে পারেন। কিন্তু যাদের বয়স বেশি হয়েছে তারা তোদের যদি কোন ব্লাড প্রেসার বা কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাবেন।

প্রশ্নঃ ডিমের কুসুম খেলে কি মোটা হয়?
উত্তরঃ ডিমের কুসুম কোনভাবে ওজন বাড়াতে পারে না। ডিমের কুসুমে থাকে ভালো কিছু ভিটামিন ও মিনারেল। কুসুমে থাকা ফ্যাট মানুষের ওজন বাড়াতে পারে না।

প্রশ্নঃ রাতে ডিম খেলে কি হয়?
উত্তরঃ রাতে ডিম খেলে পাকস্থলির গতি বাড়ায়। রাতে ডিম খাওয়া ওজন কমাতে দুভাবে কাজ করে প্রথমত একটি পাকস্থলীর গতি বাড়ায় এবং দ্বিতীয়ত দীর্ঘক্ষণ শরীরকে পরিপূর্ণ রাখে। ফলে রাতের বেশি খাওয়া প্রবণতা কমে। এছাড়াও ডিম বেশি কিছু শক্তিশালী করে হরমোনের কার্যকারিতা ভারসাম্য বজায় রাখা এবং শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে ।

প্রশ্নঃ ডিম খাওয়ার সঠিক সময় কখন?
উত্তরঃ ডিম খাওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।তবে পুষ্টিবিদদের মতে সকালের দিকে ডিম খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ পেট ফুলে ডিম খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ আপনার যদি পেট খারাপ থাকে তবে আপনি আপনার লক্ষণ গুলির উপর নির্ভর করে ডিম খেতে পারেন বা নাও খেতে পারেন।

প্রশ্নঃ ডিম খেলে কি পেটে গ্যাস হয়?
উত্তরঃ ডিম সাধারণত গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার হিসেবে বিবেচিত হয় না। কিছু লোক ডিম খাওয়ার পরে গ্যাস অনুভব করতে পারে। বিশেষ করে যদি তাদের ডিমে সহিংসতা বা অ্যালার্জি থাকে। ডিমে মিথিওনিন নামাক সালফার যুদ্ধ এমিনো এসিড থাকে। সালফার একটি গ্যাস উৎপাদনকারী যৌগ তাই এটা সম্ভব যে ডিম কিছু লোকের মধ্যে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।

ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

ডিম অত্যাধিক পরিমাণের পুষ্টিকর খাদ্য। ডিম আমাদের শরীরের সকল প্রকার সমস্যার সমাধান করে। ডিমে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিম আমাদের শরীরের কি কি উপকার করে, কিভাবে ডিম খেলে সঠিক পুষ্টি উপাদান আমরা পাব, ডিমের সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে আজকে আমি আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের কাছে তুলে ধরেছি। 

আশা করছি আমার এই আর্টিকেলের মধ্যে দিয়ে আপনারা ডিমের পুষ্টিগুণ সমূহ আলোচনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও জ্ঞান অর্জন করেছেন। আমার লেখাটি ভালো লেগে থাকলে কমেন্টস করবেন এবং আপনার বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করবেন। আজকে এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রিজু ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url