সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার সম্পর্কে আপনি কি অবগত আছেন? যদি এই সম্পর্কে
আপনি অবগত না হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই টপিক্সটি শুধু আপনার জন্য। সজনে পাতা
একটি সুপার ফুট খাবার।
এটি এমন একটি সুপার ফুড যা খেলে আপনার শরীরে নানা রোগ থেকে আপনি মুক্তি পেতে
পারেন। তাই সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম ও সকল পুষ্টি গুনাগুন ব্যবহার
উপকারিতা সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা উচিত।
সূচিপত্রঃ সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন
- সজনে পাতা খেলে কি হয়
- সজনে পাতার পুষ্টি গুনাগুন সমূহ
- সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা
- সজনে পাতার ব্যবহার সম্পর্কে
- সজনের ঔষধি গুনাগুন সমূহ
- সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
- চুলের যত্নে সজনে পাতার ব্যবহার
- ত্বকের যত্নে সজনে পাতার ব্যবহার
- ওজন কমাতে সজনে পাতার ব্যবহার
- সজনে পাতা যেভাবে সংরক্ষন করবেন
- সজনে পাতার সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর পর্ব
- সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
সজনে পাতা খেলে কি হয়
সজনে পাতা খেলে আমরা এর থেকে নানা উপকার পেয়ে থাকি। সজনে পাতা আমরা সবাই কম বেশি
চিনি। সজনে একটি ঔষধি গুনাগুন সমৃদ্ধ সবজি। এটি আমরা সব রকম ভাবে খেতে পারি।
বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় সজনে পাতা পাওয়া যায়। গ্রামবাংলায় প্রায় সবার
বাড়িতে একটি করে সজনে গাছ আছে। কিন্তু যাদের নেই তারা বাজার থেকে কিনে খায় এবং
এটি বেশ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
সজনে পাতা যদিও প্রচুর পুষ্টি গুনাগুন রয়েছেন কিন্তু আমাদের দেশের লোকজন এটি
সম্পর্কে তেমন ভালোভাবে জানে না। সজনে থাকা যাবতীয় পুষ্টি উপাদান সমূহ আমাদের
শরীরে প্রায় সব ধরনের সমস্যা সমাধানের কাজ করে। সজনে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের
শরীরের সমস্ত প্রকার টক্সিন দূর করে। এছাড়াও আমাদের যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে
তাদের ক্ষেত্রে সজনে পাতা খুবই উপকারী একটি সবজি।
এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সজনে পাতা ওজন কমাতে
সাহায্য করে। এছাড়াও যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য সজনে পাতা অন্যতম।
মূলত মানব জীবনের প্রায় সব রোগের অন্যতম ঔষধি গুনাগুন সবজি যদি কোনটি হয়ে থাকে
সেটি হচ্ছে সজনে পাতা। এইজন্য বেশি বেশি সজনে পাতা খাওয়া উচিত।
সজনে পাতার পুষ্টিগুণ সমূহ
সজনে পাতার পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে কি আপনি জানেন? যদি না জেনে থাকেন তাহলে চলুন
আজকে আমার এই পোস্টটিতে আপনাদেরকে সজনে পাতার পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে জানাবো।
সজনে পাতার পুষ্টি গুনাগুন এতটাই বেশি যা বলে শেষ করা যাবে না। গবেষকরা সজনে
পাতাকে অলৌকিক পাতা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। কেন এই সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা বলে
আখ্যায়িত করেছেন কি। আছে সজনে পাতায় চলুন জানি।
- সজনে পাতায় আমিষ আছে ২৭ শতাংশ।
- সজনে পাতায় শর্করা আছে ৩৮ শতাংশ।
- সজনে পাতায় ফ্যাট আছে ২ শতাংশ।
- সজনে পাতায় ফাইবার বা আশ আছে ১৯ শতাংশ।
- এসেন্সিয়াল অ্যামিনো এসিড আছে ৮ টি।
- ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে।
- এছাড়াও সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম জিংক আয়রন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
তো বন্ধুরা সজনে পাতায় এত পরিমাণে পুষ্টিগুণ থাকার ফলে গবেষকরা সজনে পাতাকে
অলৌকিক পাতা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি এত পুষ্টিগুণ থাকার ফলে সজনে
পাতাকে সুপার ফুট হিসাবে ও আখ্যায়িত করা হয়েছে। আশা করছি বুঝতে পারছেন যে, সজনে
পাতায় কি ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আর কেনই বা আমরা সজনে পাতা খাব।
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা
সজনে পাতার খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন। সজনে পাতায় রয়েছে
প্রয়োজনে পুষ্টি উপাদান সমূহ। আর এই প্রয়োজনে পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে সজনে
পাতা থেকে আমরা নানা ধরনের উপকার পেয়ে থাকি। সজনের পাতা সজনে ফুল সজনে ফল অর্থাৎ
সজনে ডাঁটা সবকিছুই আমাদের উপকারে আসে। তো চলুন সুজনে থেকে আমরা কি কি উপকার
পেয়ে থাকি এবার জানব।
- সজনে পাতা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে থাকা কোলেস্টেরলের লেভেল কমিয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- সজনে পাতা খাবার ফলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধান হয়।
- ডায়রিয়া কলেরা আমাশয় ও জন্ডিস এর মত রোগের জন্য এটি খুবই কার্যকারী।
- সজনের কাঁচা পাতা জুস বানিয়ে খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
- সজনে পাতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাতে সহায়তা করে।
- সজনে পাতা খাওয়ার মাধ্যমে ত্বক ভালো থাকে।
- সজনে পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- সজনে পাতা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে অ্যামোইনোয়াসিড আর এর অ্যামোইনোয়াসিড ক্যান্সার রোগীদের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত সজনা পাতা খাওয়ার মাধ্যমে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসে।
- সজনে পাতা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের আভাব পূরণ হয়।
- সজনে পাতার রস ক্ষতস্থানে লাগলে ক্ষত দ্রুত সেরে যায়।
- সজনে পাতা খাওয়ার ফলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি হয়।
- সজনে পাতা খাওয়ার ফলে রক্তস্বল্পতার সমস্যা সমাধান হয়।
- সজনে পাতা খাওয়ার ফলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে যাদের বেশি ঠান্ডা সমস্যা তারা যদি এটি নিয়মিত খায় তাহলে তাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা সেড়ে যাবে।
- দাঁতের সমস্যা শুকনা পাতা বিশেষ নিয়ামক।
- সজনে পাতা করে হারবা জয়েন্টের পেইন নিরময় সহায়তা করে।
সজনে পাতার ব্যবহার সম্পর্কে
সজনে পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা কে না জানি। সবাই আমরা সজিনা পাতা ব্যবহার করি
তবে কেউ কম কেউ বেশি। বাংলাদেশের মানুষ সজিনা পাতা নানাভাবে ব্যবহার করেন।
বিশেষ করে সজিনা পাতা বাংলাদেশের মানুষ রান্না করে বেশি খায়। তবে সজিনা পাতার বা
জুস বা সাজনা পাতার স্যুপ এই ধরনের উপকারী যেটি শরীরের জন্য খুবই উপকার এই ধরনের
রেসিপি খুব একটা খাওয়া হয় না।
আরো পড়ুনঃ জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
পাতার নানান রকম ব্যবহার রয়েছে। সজনার পাতা থেকে শুরু করে সুজনের শিকড় সজনের
ফুল বীজ বাকল অর্থাৎ সজিনার পুরো অংশই আমাদের মানব জীবনের নানা উপকারে আসে। বিশেষ
করে সজিনা এই ধরনের ব্যবহার বিদেশীরা বেশি করে। কারণ বিদেশীরা জানে সজিনা
কতটা ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন একটি খাবার।
বিদেশীরা বিশেষ করে ওদের দেশে সজিনা সংগ্রহ করে এদের চাষ করে এবং এটি নানাভাবে
খেয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষেরা সজনা পাতার খুব একটা কদর করে না।
তবে বর্তমানে বিদেশীদের দেখা দেখি বাংলাদেশ মানুষেরা অনেকটা সচেতন হয়ে গেছে সজনা
পাতার ব্যবহার সম্পর্কে। বর্তমানে বাংলাদেশে সজনা বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করেছে
অনেকে।
কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেকটা সচেতন এর ব্যবহার ও ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে।
গবেষকরা সজিনা পাতা ব্যবহার সম্পর্কে জানিয়েছে। স্বাধীনতা রান্নার পাশাপাশি
এটি কাঁচা হিসেবেও খাওয়া যায়। সজিনা পাতা আপনি যেভাবে খান না কেন সব ধরনের
উপকার পাবেন। আপনার শরীরে যাবতীয় উপকারের শরীরের ব্যবহার করুন।
সজনের ঔষধি গুনাগুন সমূহ
সজনে ঔষধি গুনাগুন থাকার ফলে গবেষকরা একে সুপার ফুট এবং অলৌকিক পাতা হিসাবে
আখ্যায়িত করেছেন। বিজ্ঞানীরা সজনে পাতার পুষ্টি উপাদান কে বিশ্লেষণ করে এর
থেকে ওষুধী গুনাগুন এর কথা উল্লেখ করেছে। তো চলুন সজনে পাতার ঔষধি
গুনাগুন গুলো জেনে নেই।
- সজনের কাঁচা পাতার রস বা জুস বা কাঁচা পাতার ভর্তা খেলে হাঁটুর ব্যথা বা ব্যথা দূর হয়ে যায়।
- সজনের কাঁচা পাতা জুস শরীরকে ডিটক্সিফাই করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
- ফোড়া ভালো করতে সাজিনা গাছের আঠা লাগালে তাড়াতাড়ি ফোড়া ভালো হয়ে যায়।
- মাথা ব্যাথা সারতে সোজনের আঠা ব্যবহার করলে মাথা ব্যাথা সেরে যায়।
- সাজিনার শিকড় থেতলে শিকড় থেকে যে রস বের হয় সেই রস যদি কান ব্যথায় লাগানো হয় তাহলে অতি তাড়াতাড়ি কান সেরে যায়।
- শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা বা ফুলে গেলে সেখানে যদি সজিনার শিকড় বেটে ফোলা বা ব্যথার জায়গা লাগিয়ে দিলে সেটি সেরে যায়।
- কুকুর কামড় দিলে কুকুরের বিষ ধ্বংস করার জন্য কামড়ের জায়গায় সাজনা পাতার পেস্ট এবং এই পেস্ট এর সাথে লবণ হলুদ রসুন এবং গোল মরিচ একসাথে মিক্স করে লাগাতে হবে। তাহলে কুকুরের বিষ ধ্বংস হয়ে যাবে।
- জ্বর সর্দি কাশি সারতে সজিনা পতার শাক খুবই উপকারী। এই সময় সজিনা পাতার ভাজি ভর্তা এমনকি সজনা পাতার সকল প্রকার রেসিপি খুবই উপকারী।
- দুধ ও সজিনা পাতার ফুলের রস মিশিয়ে খেলে মূত্র পাথর ও হাঁপানি রোগ নিরাময় হয়।
- সাজিনার কাঁচা পাতার রস করে খেলে ডায়াবেটিক্স নিয়ন্ত্রণের থাকে।
- সজনে পাতা এক থেকে দুই মুখ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে ভালো করে প্রতিদিন করলে দাতের মাড়ির সকল সমস্যা সমাধান হবে।
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে তাহলে আপনাকে ধৈর্য সহকারে এটি
পড়তে হবে। সজনে পাতা আমরা নানাভাবে খেয়ে থাকি। সজনে পাতা আমাদের দেশের
মানুষ শুধুমাত্র ভর্তা এবং সজনের ডাটা রান্না করে খায়। কিন্তু আপনি যদি সজনে
পাতা থেকে সজনে সঠিক পুষ্টি উপাদান গুলো পেতে চান তাহলে সজনে পাতার খাওয়ার নিয়ম
গুলো ভালোভাবে জানতে হবে। নিম্নে সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম তুলে ধরা হলোঃ
সজনে পাতার গুড়ার জুসঃ
আপনি এক গ্লাস পানির ভিতর এক গ্লাস সজনের গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার যারা
শুধু পানি দিয়ে খেতে পারেন না যাদের ভালো লাগে না তারা এক গ্লাস পানির ভিতর
আপনার যতটুক দরকার লেবু মিশিয়ে এবং তার সাথে মধু মিশে খেতে পারেন। আবার আপনি এক
গ্লাস পানির সাথে পরিমাণ মতো টক দই এবং স্বাদমতো টেস্টিং সল্ট এবং স্বাদমতো
জিরা গুড়া একসাথে মিক্স করে খেতে পারেন।
সজনে পাতার স্যুপঃ
আপনি বিভিন্ন সবজির সাথে সজনে পাতা মিশিয়ে অল্প তেল দিয়ে তার সাথে ১ চামচ রসুন
কুচি ১ কাপ পেয়াচ কুচি স্বাদমতো লবণ ও অল্প পরিমাণের গোলমরিচ দিয়ে হালকা করে ভেজে
নিয়ে পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে এরপর পানি একটু কমে আসলে নামিয়ে নিতে হবে।
এভাবে স্যুপ বানিয়ে খেলে আপনি আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো পেয়ে
যাবেন।
সজনে পাতা ও টক দইঃ
পরিমাণ মতো টক দই অথবা এক কাপ টক দের মধ্যে এক চামচ সজনে পাতার গুড়া মিশিয়ে
নিয়ে তার সাথে টেস্টিং সল্ট মেশিন খেলে আপনি এটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
গুলো পাবেন।
কাঁচা সজনে পাতার জুসঃ
আপনি যদি সজনে পাতা থেকে একদম একুরেট পিওর পুষ্টি উপাদান গুলো পেতে চান তাহলে
কাঁচা সজনে পাতা ও সামান্য পরিমাণে পানি দিয়ে ব্লেন্ডারের প্ল্যান করে সেটি
ছেঁকে নিয়ে জুস বানিয়ে খান। এই কাঁচা পাতার জুস শরীরের টক্সিন বের করে ত্বককে
সুস্থ রাখে।
সজনে পাতার ডালঃ
সজনে পাতা ডাল দিয়ে রান্না করা যায়। মুসুড় ডাল দিয়ে আপনি সজনের ডাটা রান্না করে
খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয়ে থাকে। তাছাড়া ডালে প্রচুর পরিমানে
ভিটামিন রয়েছে। যা আপনার শরীরের দুর্বলতা কমায়।
সজনে পাতার ভর্তাঃ
সজনে পাতা ভর্তা করেও খেতে পারেন। সজনে পাতার সাথে পরিমাণ মতো পেঁয়াজ রসুন
শুকনা মরিচ স্বাদমতো লবণ একসাথে বেটে আপনি ভর্তা করে খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে
কাঁচা সজনে পাতা ভর্তাটা খাওয়ার চেষ্টা করবেন বেশি। কাঁচা সজনে পাতার ভর্তা
শরীরের জন্য উপকারী।
সজনে পাতার ভাজিঃ
সজনে পাতার সাথে রসুন, পেয়াজ, শুকনা মরিচ স্বাদ মত লবন দিয়ে আপনি অল্প তেলে করে
ভেজে নিন। তারপর ভাতের সাথে মিশিয়ে খান। এতে করেও আপনি এই সবজি থেকে প্রয়োজনী
পুষ্টি উপাদান পাবেন।
সজনে পাতার চাঃ
আপনি সাধারন চা এর মত করে সজনে পাতার চাও খেতে পারেন। কাঁচা সজনে পাতা এবং শুকনা
সজনে পাতার ও সজনে পাতার গুড়া দিয়ে পানিতে জ্বাল করে সেটি ছেকে নিন এরপর খান।
আপনি এটির স্বাদ বাড়ানোর জন্য ১ চামচ মধু মিসাতে পাড়েন।
সজনে পাতার সালাতঃ
সজনে পাতা দিয়ে আপনি সালাত বানিয়ে খেতে পারেন। সজনে পাতার সাথে বিভিন্ন ধরনের
সবজি যেগুলো কাঁচা খাওয়া যায় সে ধরনের সবজি একসাথে মিশিয়ে আপনি হালকা বিট লবণ
এবং স্বাদমতো গোল মরিচের গুঁড়ো দিয়ে সালাত বানিয়ে খেতে পারেন। সালাত সবসময়
কাঁচা খাওয়া উচিত। আর কাঁচা খেলে এ থেকে আরো পুষ্টি গুনাগুন ভালো পাওয়া যায়।
চুলের যত্নে সজনে পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে সজনে পাতার ব্যবহারের জন্য। আপনি কি চুল নিয়ে টেনশনে আছেন? যদি চুল
নিয়ে টেনশনে থাকেন তাহলে আর দেরি না করে সজনে পাতার ব্যবহার জানুন। আমরা চুলের
কোন সমস্যা হলে বা চুলের সিল্কিনেস ফিরিয়ে নিয়ে আসতে অথবা চুলের যাবতীয়
সমস্যার দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিনের ব্যবহার করে থাকি। প্রাচীন কাল
থেকে চলে আসা নিয়ম অনুযায়ী মেহেদি পাতার ব্যবহার করে থাকি।
আরো পড়ুনঃ মুলতানি মাটি ব্যবহার করার নিয়ম
এবং তার সাথে ডিম মিশিয়ে চুলে দিয়ে থাকি। এছাড়াও মেথি আমলকি নিম পাতার রস
নিমের তেলসহ আরো অনেক ধরনের জিনিস আমরা চুলে জন্য ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা সবাই
এটা কি জানি না সজনে পাতা থেকেও চুলের যত্ন নেয়া যায়। সত্যি সজনে পাতা থেকে
চুলের যত্ন নেওয়া যায়। সজনে পাতার পেস্ট বা সজনে পাতার গুড়া সাথে টক দই এবং
তেল একসাথে মিশিয়ে মিশিয়ে গোসলের আগে মাথারচুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত
ভালোভাবে লাগিয়ে নিন।
এরপর ঘন্টাখানেক রেখে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। তারপর দেখবেন চুল কতটা সফট ও
সিল্কি হয়েছে। আপনি এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন লাগিয়ে দেখুন কতটা ভালো
রেজাল্ট পান। আমরা চুলের যত্নে বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের তেল কিনে নিয়ে এসে
লাগায় এতে চুল খুব একটা বড় হয় না বা চুলের যত্নে সেভাবে কোন রেজাল্ট পাওয়া
যায় না। প্রতিনিয়ত চুল উঠতে থাকে চুলের আগা ভেঙে যায় নানা সমস্যা হয়ে
থাকে।
তো বন্ধুরা, বর্তমানে মরিঙ্গার তেল বা সজনে তেল খাওয়া থেকে শুরু করে চুলও লাগানো
যায়। সজনে পাতার তেল চুলের যত্নে ব্যাপক কার্যকারী। এটি চুলের গোড়াকে শক্ত করে
চুলকে মজবুত করে। চুল ওঠা বন্ধ করে। এবং সজনে পাতার তেল চুলের গোড়া শক্ত করে
চুলকে মজবুত করে এবং চুল ওঠা বন্ধ করে ও চুলকে লম্বা করে এবং চুলের সিল্কিনেস
ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ডাক্তারি চিকিৎসা সজনে পাতার গুড়া এবং তেল চুলের যত্নে
ব্যবহারের যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার ব্যবহার
ত্বকের যত্নে সজনে পাতা ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সজনে পাতায় রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ভিটামিন বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার ফলে ত্বকের
যত্নে এটি বিশেষভাবে কার্যকারী। বর্তমানে ত্বকের যত্নে অন্যান্য প্রাকৃতিক
উপাদানের পাশাপাশি সজনে পাতার গুড়া ব্যবহার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর
প্রধান কারণসজনে পাতার রয়েছে প্রাকৃতিক পুষ্টি গুণাগুণ সম্পন্ন উপাদান।
এটি ত্বকে লাগানোর মাধ্যমে ত্বকের কোলাজেন তৈরি করে। ত্বকের রিংকেল পরা থেকে দূর
করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সজনে পাতাকে
সুপার ফুড বলে অভিহিত করেছেন। সুজনে পাতা যে শুধু আমরা রান্না করে খাব আর এতেই
আমাদের সকল উপকার আসবে এটা নয়। সজনে পাতা আমরা ত্বকের যত্নের ব্যবহার করব।
আরো পড়ুনঃ রাতে ঘুম না হওয়ার কারন ও তার প্রতিকার
এতে করে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধান হবে। যাদের অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা তারা
সজনে পাতার গুড়ার সাথে অন্যান্য উপাদান মিক্সড করে ত্বকে ব্যবহার করুন। তাহলে
ব্রণের সমস্যার দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও সজনে পাতার ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের
বয়সের ছাপ দূর করা যায়। সজনে পাতার গুড়ার সাথে টক দই, কলা, মধু ও লেবুর রস
একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান এতে করে ত্বকের যাবতীয় সমস্যার দূর হবে।
ওজন কমাতে সজনে পাতার ব্যবহার
ওজন কমাতে সজনে পাতার ব্যবহার যথেষ্ট কার্যকরী। আপনি যদি প্রাকৃতিকভাবে আপনার
শরীরের ওজন কমাতে চান তাহলে অবশ্যই সজনে পাতার ব্যবহার করুন। আপনি নিয়মিত সজনে
পাতার জুস বানিয়ে খান এতে করে দেখবেন আপনি শরীরে অন্যান্য পুষ্টিগুনের সাথে সাথে
শরীরে বাড়তি চর্বি ওজন কমাতে এটি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে।
বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসের পেশেন্ট তাদের ওজন কমানোর খুবই দরকার। ডাইবেটিস
রোগীরা প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে চাইলে বেশি বেশি সজনে পাতার ব্যবহার করুন। আপনি
ডায়েট কন্ট্রোল এর জন্য সজনে পাতার চা পান করতে পারেন। এইতো করে আপনার শরীরের
ভিতরে থাকা ডিটক্সিন বের করে দেয়। এবং আপনার শরীরকে সুস্থ ও অর্জন নিয়ন্ত্রণে
সহায়তা করে।
সজনে পাতার জুস সজনে পাতার চা যেমন ওজন কমাতে সহায়তা করে ঠিক তেমন ডায়াবেটিস
রোগীদেরাড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই আপনি যদি নিঃসন্দেহ প্রাকৃতিক ভাবে
নিজের শরীরের ওজন কমাতে চান তাহলে নিয়মিত সজনে পাতার জুস সজনে পাতার সব রকমের
রেসিপি আপনি খেতে পারেন। খেতে করে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ফ্ল্যাটের সাথে সাথে
অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।
সজনে পাতার যেভাবে সংরক্ষণ করবেন
সজনে পাতা সংরক্ষণ করতে না জানলে আমার এই পোস্টটি থেকে জেনে নিন।সজনে পাতা সারা
বছর পাওয়া যায় না এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট সিজনে পাওয়া যায়। তাই এটি একটি
সিজনের খাদ্য হিসেবে খাদ্য তালিকায় উল্লেখিত। যেহেতু এটি একটি সিজনাল সবজি এজন্য
এটি সারা বছর পাওয়ার জন্য আপনাকে এটিকে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। আপনি সজনে পাতা
সংরক্ষণ যেভাবে করবেন তার নিম্নে দেয়া হলোঃ
- সজনে পাতা প্রথমে সজনে গাছ থেকে তুলে নিয়ে আসতে হবে
- এরপর সজনে পাতার ডাল থেকে ভালোভাবে ছাড়িয়ে নিতে হবে
- ডাল থেকে সজনে পাতা ছড়ানোর পরে সজনে পাতা গুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- এরপর সজনে পাতাগুলো এবং সজনে পাতার ডাল গুলো কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
- দুই তিন দিন ভালোভাবে শুকানোর পরে এগুলো ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন।
- ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে এগুলো খুব সুন্দর করে প্যাকেটের মধ্যে বা বয়ামের মধ্যে করে তুলে রাখুন। এতে করে অনেকদিন পর্যন্ত এই সজনে পাতার গুড়া ব্যবহার করতে পারবেন
- এছাড়া আপনি সজনে পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে রোজা শুকাতে পারেন এর মধ্যে রোজা রাখতে পারেন এতে করে শুকনো পাতাগুলো অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
সজনে পাতার সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর পর্ব
সজনে পাতার বিভিন্ন রকম ব্যবহার বিধি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। তবুও কিছু প্রশ্ন
থেকে যায় সজনে পাতা কে ঘিরে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে নিম্নে সজনে পাতার সম্পর্কে
কিছু প্রশ্ন উত্তর আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলোঃ
প্রশ্নঃ সজনে পাতার উপকারিতা কি কি?
উত্তরঃ অনেক সময় বিষাক্ত হতে পারে, যা স্নায়ু কে অবশ করে দিতে পারে। তাই
খাওয়ার ক্ষেত্রে এটি বর্জন করা শ্রেয়। এ ছাড়া এর বীজ মাছ এবং রাবিটের জন্যও
বিষাক্ত হতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন অবশ্যক।
প্রশ্নঃ কিডনি রোগীকে সজনে পাতা খেতে পারবে?
উত্তরঃ কিডনি রোগী সজনে পাতা খাওয়ার ফলে তার শরীর সুস্থ থাকে। কিডনি এবং
মূত্রাশয়ের পথের জমাট সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে দেয় দেহের এই গুরুত্বপূর্ণ
অঙ্গটিতে রাখে সুস্থ সবল।
প্রশ্নঃ মরিঙ্গা পাতা প্রতিদিন খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ মরিঙ্গা পাউডার খাওয়া নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়। প্রতিদিন ৭০ গ্রাম
মরিঙ্গা পাতা বা ১১ চামচ মরিঙ্গা পাউডার সমতুল্য সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ সজনে পাতার চা খেলে কি হয়?
উত্তরঃ সজনে পাতার অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি পানীয়। উপাদানের সমৃদ্ধ থাকায়
সজিনা গাছকে মিরাক্কেল ট্রি এবং পাতাকে বলা হয় সুপার ফুড। এতে আছে পর্যাপ্ত
পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন বি৯, ভিটামিন এ সহ দেহের জন্য উপকারী অন্যান্য ভিটামিন ও
খনিজ উপাদান।
প্রশ্নঃ সজনে পাতা খেলে কি প্রেসার কমে?
উত্তরঃ সজনে পাতা বিশেষ জল তৈরি করে, প্রথমে হাফ লিটার জল নিন তারপরে তাতে
কমপক্ষে ১০০ গ্রাম সোজনে গাছের পাতা দিয়ে আধা ঘন্টা সেদ্ধ করুন। এরপর জল টি ছেকে
নিন। তারপরে সেই জলকে একটু ঠান্ডা করে পান করুন। এতে পাঁচ মিনিটের মধ্যে উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে।
প্রশ্নঃ সজনে পাতা কি কি রোগের কাজ করে?
উত্তরঃ সজনে কোলেস্টেরলের লেভেল কমিয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, কোলায়টিস এবং জন্ডিসের সময়
ব্যাপক কার্যকারী।কাচা পাতার রস আরো বেশি উপকারী শরীরের জন্য। এছাড়াও শত বছর ধরে
প্রায় তিনশোর বেশি রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
প্রশ্নঃ মরিঙ্গা খেলে কি ঘুম আসে?
উত্তরঃ মরিঙ্গা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস। রাতে মরিঙ্গা গ্রহণ
করলে কোটিসোলের মাত্রা কমাতে এবং আরো বিশ্রামের ঘুমের জন্য শরীরকে শিথিল করতে
সাহায্য করতে পারে।
প্রশ্নঃ মরিঙ্গা পাতা মুখে মাখলে কি হয়?
উত্তরঃ মরিঙ্গা পাতার মুখে মাখলে বয়সের ছাপ এবং পিকমেন্টেশন দূর করতে
সাহায্য করে। প্রতিরোধ করতে দারুণভাবে সহায়ক। এতে থাকা ভিটামিন সিট ত্বক এর রং
উজ্জ্বল করে।
প্রশ্নঃ মরিঙ্গা পাতা রাতে খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ রাতে খেতে পারেন মরিঙ্গা পাতা। সাধারণত দিনের যেকোনো সময়
খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করা হয়। এগুলি পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য
উপকারিতা রয়েছে।
প্রশ্নঃ সজনে পাতা খেলে কি ওজন বাড়ে?
উত্তরঃ সজনা পাতা খেলে কোনভাবে ওজন বাড়ে না। বরং এটি মোটা বণিক রেট
বাড়ায় ওজনকে বসে রাখার জন্য জরুরী।
প্রশ্নঃ সজনে পাতার গুড়া কি খালি পেটে খাওয়া যায়?
উত্তরঃ খালি পেটে সকালে সজনা পাতার গুড়া খাওয়া যেতে পারে এবং এটি অনেকের
জন্য উপকারীও হতে পারে। সজনে পাতার গুড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার শরীরে বিভিন্ন উপকারে আসে।
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
সজনে পাতা খুবই উপকারী একটি খাবার। সজনেতে লেবুর চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি
দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং দুইগুন আমিষ। গাজরের চেয়ে চার গুণ
ভিটামিন এ কলার চেয়ে তিনগুণ পটাশিয়াম রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় সজনে কতটা
উপকারী আমাদের শরীরের জন্য। প্রিয় পাঠক আজকে আমি আপনাদেরকে সজনে পাতার ব্যবহার,
সজনে পাতার উপকারিতা পুষ্টিগুণ সংরক্ষণ পদ্ধতি সবকিছু সুন্দরভাবে বর্ণনা
করেছি।
আশা করছি সজনে পাতার ব্যবহার এবং যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে ধারণা
পেয়েছেন। আমার পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করতে ভুলবেন নাম
এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ আপনাদের। দেখা হবে অন্য কোন
বিষয় নিয়ে।
রিজু ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url